কয়েকদিন আগে চবি দর্শন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের একটা ফেইসবুক গ্রুপে এ বিষয়ে নিচের পোস্টটা দেয়ার পরে এতে এ পর্যন্ত ১৪৩টি মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য দেয়া হয়েছে। সাড়া জাগানো এই স্ট্যটাসকে সংরক্ষণের জন্য এই নোট। কমেন্টকারীদের নাম, বিষয়ের দ্বিরুক্তি ও অপ্রাসংগিক কথাবার্তা বাদ দেয়া হয়েছে। আশা করি ‘কর্তা ব্যক্তিরা’ এসব খোলামেলা পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ হতে রসদ গ্রহণ করবেন।


এ বছর চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ভর্তির ক্ষেত্রে পপুলার পছন্দ তালিকায় ফিলোসফির অবস্থান ছিলো পুরনো বিভাগগুলোর সর্বনিম্নে। আগে ইংরেজী বিভাগের পর পরই ভর্তির ক্ষেত্রে দর্শন বিভাগের প্রেফারেন্স ছিলো। কেন এই অধোগতি, তা নিয়ে বিভাগের পক্ষ হতে একটা ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করা হয়েছে

আমি চাচ্ছি বিষয়টা নিয়ে এখানেও আলোচনা হোক। প্রায় শখানেক স্টুডেন্ট ভর্তি বাতিল করে অন্য ডিপার্টমেন্টে মাইগ্রেশান করেছে। দৃশ্যত: স্টুডেন্টরা ফিলোসফি পড়তে চাচ্ছে না। এর কারণ কী হতে পারে?

Comments:

  • স্টুডেন্টসরা মনে করে আমাদের এই সাব্জেক্টটি প্রপেশন লাইফ অর্জন করার ক্ষেত্রে কোন কাজ দেয়না। এই জন্য অনেকের মাঝে হতাশা কাজ করে।
  • বিশেষত অন্য আর একটি কারন হলো ফিলোসফিকে জানতে হলে পড়াশুনা ভাল করতে হয়। কিন্তু এখনকার ষ্টুডেন্টরা পডতে চায়না।
  • নতুন ছাত্ররা ফিলসফি সম্পর্কে কিছু জানেনা। ইসলামের ইতিহাস কেমন সাবজেক্ট জানাশোনা। তাই সেখানেই মাইগ্রেশান করা।
  • সিলেবাস করা হোক ‘কোর ফিলোজফি,এক্সপানশন অব নলেজ, প্রাক্টিকাল লাইফ সারভাইভল’ এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে।
  • পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা সংস্কার মনে হয় এখন সময়ের চাহিদা। পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখে নাম্বার পাবার দরুন, না বুঝে মুখস্থ করা, কপি-পেস্ট করে লিখে আসা এগুলো …।
  • বাধ্যতামূলকভাবে প্রেজেন্টেশন, প্রপারলি এসাইনমেন্ট প্রদান, কেস এনালাইসিস ইত্যাদির প্রভিশন রাখা হোক।
  • স্টুডেন্ট-ফ্রেন্ডলি করা হোক …।
  • দেশের অধিকাংশ সরকারি জবগুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে ফিলোসফি’তে টিক মার্ক দেওয়ার অপশনই নেই। হিসট্রি’তে পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে আবেদনের সুযোগ পাওয়া যায়।
  • বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত ‘দর্শন’ বিষয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি বা আমরা যারা এই বিষয়ে পড়েছি তারাই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বর্তমান প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে পারছিনা কিংবা নিরুৎসাহিত করছি।
  • দর্শন বিষয় পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকবৃন্দ বিষয়টিকে সহজভাবে উপস্থাপন করার চেয়ে মুখস্থবিদ্যা পদ্ধতিতে পাঠদান করে থাকেন। ফ্রেন্ডলি হতে পারেন না বা হতে চান না।।
  • … শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের খ্যাতির অভাব।
  • দর্শন বিষয়টি মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক এ ছিল না বলে অনেকে এ সম্পর্কে অবগত নয়।
  • অনেকে ভাবে যে দর্শন ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক জীবনে কোন গুরুত্ব বহন করেনা।
  • ফিলোসফিতে কি কি র্কোস পড়ানো হয় সেটাও অনেকে আন্দাজ করতে পারে না। সম্ভবত এই কারনেও অনেকে এই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয় না।
  • বিভাগে নিয়মিত একাডেমিক- এক্সট্রাএকাডেমিক প্রোগ্রাম না হওয়া …। অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট যখন প্রচার প্রসারে ব্যস্ত ঠিক তখন আমরা শুনতে পাই, নবীন বরণ আর বনভোজন একই দিনে হবে …।
  • … ক্লাসের গতানুগতিক শীট নিয়ে ব্যস্ত ছাত্রছাত্রীরা, ক্লাসে যা পড়ানো হোক সেটা বাদ দিয়ে।
  • আমাদের না আছে কোন কর্মশালা, না আছে fieldwork। আমরা নিজেদের গুটিয়ে রাখতেই পছন্দ করি …।
  • আমাদের দর্শন কি সেটা বুঝানোর জন্য সেমিনারের আয়োজন করতে পারি
  • ফিলোসফি পড়ার পরে সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বুঝানো যেতে পারে।
  • আমাদের ডিপার্টমেন্টের অর্জন গুলো নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।
  • বিষয়ভিত্তিক সহজ ভাবে তৈরী করা ভিডিও তৈরী করে সেগুলোর প্রচার করা যেতে পারে।
  • ফিলোসফিকাল টপিকের উপর প্রেজেন্টেশান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।
  • নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারি
  • অনেকের ধারণা ফিলাসফি পড়লে মানুষ নাস্তিক হয়ে যায়।
  • কোর্স কমিয়ে শিক্ষার্থীদের উপযোগী এবং বোধগম্য করে তুলতে হবে, তথাকথিত ভূমিকা, উপসংহার, দিস্তা দিস্তা পেইজের উত্তর পত্র পরিহার করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক বিষয়গুলো উত্তর করতে এবং গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য অনুপ্রানিত করতে হবে।
  • নিয়মিত ছাত্র-শিক্ষক মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
  • বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সেমিনার করা যেতে পারে।
  • গ্রুপ স্টাডির আয়োজন করা যেতে পারে।
  • ফিলোসফিতে পড়ার উপকরণ অথ্যাৎ বই
  • আমাদের ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনার পদ্ধতিটা গতানুগতিক। আমাদেরও অনেক কথা বলার থাকে হয়ত বলতে পারতাম না বা ভয় কাজ করত। শিক্ষার্থীদের সাথে এতো চোখ রাঙ্গানোর কী আছে?
  • শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করে ট্রেডিশনাল শীট পড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসে। ভালো মার্কসও পায়।
  • কিছু কিছু শিক্ষকের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব, ডিপার্টমেন্ট ছাত্র -ছাত্রী বান্ধব নয় আরো অনেক কারণ আছে।
  • আমাদের কোর্স গুলো বাধ্যতামূলক ইংরেজিতে করা হলে মনে হয় গ্রহনযোগ্যতা আরো বাড়ত।
  • পুজিবাদি সময়ে দর্শন যে তার আকর্ষণ হারাচ্ছে এইটা তারই প্রভাব। এইটা হতে পারে দর্শন নিজেকে গুটিয়ে রাখার জন্য আর নগদ কোনো প্রাপ্তি না দেওয়ার জন্য। এই সমস্যার সমাধান করতে চাইলে জাতীয় ভাবে এবং সব বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে উদ্যোগ নিতে হবে।
  • এতো দিন কলা অনুষদে দর্শনের প্রতি আগ্রহের কারণ ছিল জট না থাকা। এখন তো অন্য গুলোতেই নাই প্রায় ….। এইক্ষেত্রে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া যাইতে পারে।
  • সেমিনারে ইন্টারনেট এক্সেস না থাকা, মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম না থাকা, ক্লাসের মধ্যে গাদাগাগি, ক্লাস বা করিডরে কালারফুল ডেকোরেশান না থাকার সমস্যা দূর করতে হবে।
  • মাঝে মাঝে ছাত্র শিক্ষক আলোচনা বা চা চক্রের আয়োজন করা দরকার।
  • গত বছরে রেজাল্ট দিতে দেরী হওয়ার কারণে সিনিয়র স্টুডেন্টদের মাধ্যমে নবীণ বিভাগ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ইমপ্রেশান পেয়েছে।
  • পরীক্ষার নম্বর এমন ভাবে দেয়া,যাতে স্টুডেন্টরা পরর্বতীতে প্রতিযোগিতায় অন্য বিভাগের স্টুডেন্টদের সাথে টিকে থাকতে পারে। ঢাবিতে যেখানে নিয়মিত ৩.৮-৩.৯ জিপিএ উঠে সেখানে আমাদের এখানে তা স্বপ্নাতীত। স্টুডেন্টদের গড় রেজাল্ট যাতে ৩.৫ এর উপরে থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
  • এখনো দশ বই দেখে নোট করে পড়ার জন্য বলা হয়। সেই যুগ আর নাই। এখন মুক্ত জ্ঞান আলোচনার সময়।
  • নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরীক্ষার আগে হুড়াহুড়ি করে ক্লাস নেয়া হয়। বিশেষ করে প্রথম বর্ষে শুরুর ক্লাসগুলো ঠিকমতো না হওয়ায় স্টুডেন্টদের অনাগ্রহ তৈরী হয়।
  • ইংরেজি মিডিয়াম বাধ্যতামুলক হোক
  • আগে প্রতিটা কলেজে অন্তত লজিক বা ফিলোসফি ছিল। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে এই বিষয়টি ছাড়া কলেজ চালানোর ব্যবস্তা করে রেখেছে…
  • যুগোপযোগী কোর্স চালু করা, যাতে আধুনিক বিশ্বের সাথে সংযুক্ত থাকা যায়।
  • জগ- মগ পদ্ধতির পাঠদান থেকেও সরে আসতে হবে।
  • অংশগ্রহণমুলক পাঠদান পদ্ধতিতে একজন শিক্ষক কিভাবে বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে লেকচার দেয় ভাবতে অবাক লাগে।
  • শিক্ষার্থীর দক্ষতা কিংবা মনোপেশিজ চিন্তার বিকাশের জন্য ( psychomotor) একজন শিক্ষক কে পাঠদানের পর অব্শ্যই ভাবতে হবে তার পাঠদান পদ্ধতি কতজন শিক্ষার্থীকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন অথবা কতজন শিক্ষার্থীর তিনি আস্থাভাজন হতে পেরেছেন।
  • কারণ প্রত্যক শিক্ষার্থি তার তার স্ব স্ব বিষয় কিংবা বিভাগ কিংবা বিভাগের শিক্ষকের সেবা বা পাঠদান কে তার অনুজ বা অন্যের কাছে product হিসেবে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুরা এ প্রচার টা সহজেই সাবেক ছাত্র বা বর্তমান ছাত্রদের কাছ থেকে ই পেয়ে থাকে।
  • শিখন- শিক্ষণ পদ্ধতির পরিবর্তনের জন্য কিংবা শ্রণিকক্ষে কার্যকর শিক্ষণ- শিখন পদ্ধতির প্রয়োগের জন্য শিক্ষকদের অবশ্যই Pedagogy and ICT training গ্রহণ করা দরকার।
  • classroom management and teaching – learning methods ক্ষেত্রে আরও আধুনিকায়ন ও ICT based হওয়া উচিত।
  • “Read Philosophy but don’t try to be Philosopher” কথাটা অনেকটা এরকম শুনায় “ডাক্তারি পড় কিন্তু ডাক্তার হবা না” যে ডিপার্টমেন্ট এ প্রথমেই এসে এ কথা শুনানো হয়, সেটা সম্পর্কে বিরূপ ধারনা হবে খুব ই স্বাভাবিক।
  • পরীক্ষাপদ্ধতিটা এমন হোক যেখানে পৃষ্ঠার উপর আমার মেধা যাচাই হবেনা, বই খোলা থাকবে পাশে, অথচ উত্তর টা বই থেকে নয় মাথা থেকে আসবে। আমাদের সেভাবে গঠন করা হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুন

অনুগ্রহপূর্বক আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহপূর্বক এখানে আপনার নাম লিখুন